Anondadhara Online
Published on Anondadhara Online (https://anondadhara.com)

প্রথম পাতা > শিশুর স্থুলতা: কারণ ও করণীয়

image

শিশুর স্থুলতা: কারণ ও করণীয়

Arefin এর ছবি
৩ বছর ৩ মাস ২২ দিন আগে
  • facebook [1]
  • twitter [2]
  • google+ [3]
  • email [4]
  • print [5]
  • print [6]

শিশুর ওজন বৃদ্ধি নিয়ে এক এক পরিবারে এক এক রকম চিন্তা। অনেকে নিজের শিশুর বেড়ে ওঠাকে নেন আনন্দের সাথে, ভাবেন বাচ্চা খাওয়া দাওয়া করছে ভাল করে, স্বাস্থ্যবান হচ্ছে। আবার অনেক পরিবারে সামান্য ওজন বৃদ্ধিকেও মুটিয়ে যাওয়া ধরে নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে মানসিক অত্যাচারও করা হয় শিশুটিকে, যদিও এধরণের পরিবারের সংখ্যা কম। তবে বেশিরভাগ পরিবারের মা-বাবাই শিশুদের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন নন। স্থূলতা ও ভাল স্বাস্থ্যের মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে। একটি স্থূল শিশুর বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের সম্ভাবনা তো থাকেই, তার সামাজিক জীবনও বেশি সুখের হয় না, খেলাধুলার সময় বা বন্ধুদের কাছে তাদের হেনস্থা হতে হয় প্রায়ই।

স্থূলতা কাকে বলা যায় বা কত ওজন হলে একটা শিশু স্থূলতায় ভুগছে বলা যাবে? এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে শিশুর বয়স ও উচ্চতার উপর। একটি ১০ বছর বয়সী ৪ ফুট উচ্চতার বাচ্চার ওজন যদি ৬০-৭০ কেজি হয় তাহলে তাকে স্থূল বা ওবেস বলা যায়।

স্থূলতা বা বাড়তি ওজনের মূল কারণ অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ এবং তা ভালমত ব্যায় না করা। বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে বেশিরভাগ শিশুকে আর খেলার মাঠে দেখা যায় না, তাদের দেখা যায় টিভি, ল্যাপটপ বা মোবাইলের সাথে; পাশে অস্বাস্থ্যকর কোন স্ন্যাকস বা ফাস্ট ফুড। এতে একই সাথে হাজার হাজার বাজে ক্যালরি গ্রহণও ঘটছে, এবং শুয়ে বসে গ্যাজেট চালানোর ফলে তা খরচও হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে শিশুদের। কিন্তু পরিণতিটা স্বাভাবিক বা সুখকর হচ্ছে না মোটেই।

শিশুদের খাদ্যাভ্যাস

বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। ফুডি কালচার, রেস্টুরেন্টের সহজলভ্যতা, ক্যানড ফুড ও স্ন্যাকসের বাজার দখল, চিনি জাতীয় খাবারের আধিক্য ইত্যাদি কারণে শিশুদের বর্তমান ডায়েট চার্টের প্রায় পুরোটাই অস্বাস্থ্যকর খাবারে পরিপূর্ণ। শিশুরা সাধারণত যেসব খাবার অধিক পরিমাণে খাচ্ছে সেগুলো হল:

১। ফাস্টফুড; যেমন বার্গার, পাস্তা, পিৎজা, ফ্রাইস ইত্যাদি। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে, যা সহজে বার্ন হতে চায় না সারাদিন পরিশ্রম করলেও। আর শুয়ে বসে থাকা আর ফাস্টফুড খাওয়া একসাথে চললে তো কথাই নেই।

২। কোমল পানীয় বা কোল্ড ড্রিঙ্কস; এসব পানীয়তে নিম্নমানের কার্বোহাইড্রেট ও চিনি থাকে।

৩। কেক, মিষ্টি, ডোনাট ইত্যাদি মিষ্টি ও চিনি জাতীয় খাবারের প্রতি শিশুদের আগ্রহ ছিল সবসময়ই। এখন এগুলো অনেক সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ার কারণে গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে।

হরমোন জনিত কারণ

প্রত্যেকটি স্থূল শিশুর পিছনেই তার খাদ্যাভ্যাস দায়ী নয়, অনেকেই হরমোন জনিত কারণে স্থূল হয়ে যায়। সেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভাল।

কি ধরণের রোগ হতে পারে স্থূলতা থেকে?

স্থূলতা থেকে হতে পারে বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাই। শরীরে বাড়তি মেদ শরীরের স্বাভাবিক প্রায় সকল প্রক্রিয়া ব্যহত করে, তাই স্থূল শিশুরা দুর্বলতা, ক্লান্তি থেকে শুরু করে অনেক রকম সমস্যায় ভুগে থাকে যার জের প্রাপ্তবয়সে এসেও থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ রয়েছে যা স্থুলতার কারণে হয়ে থাকে।

১। রক্ত চলাচলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যহত হয় মেদের কারণে, তাই ধমনী ও শিরার রোগ হতে পারে।

২। স্থূলতায় উচ্চ রক্তচাপ হওয়া স্বাভাবিক, শিশুদের মধ্যেও।

৩। লিভারে ফ্যাট জমে নন-অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার সিনড্রোম হতে পারে।

৪। পিত্তথলিতে পাথর জমতে পারে।

৫। অ্যাজমা বা ক্যান্সার হতে পারে।

৬। মেয়েদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্র অনিয়মিত হতে পারে।

৭। আচরণগত বা মনস্তাত্বিক সমস্যাও দেখা যায়।

শিশুর স্থূলতায় করণীয়

স্থূলকায় শিশুর জীবন খুব সহজ হয় না। তাই তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন পরিবারের সহযোগিতা। তার পরিবারের মানুষ যদি তার অবস্থা না বুঝতে পারে তাহলে তা একটি শিশুর জন্য প্রচন্ড মানসিক কষ্টেরও কারণ হতে পারে। এবং তারা যেহেতু শিশু, তাদের ভালমন্দের সিদ্ধান্ত প্রায় পুরোটাই বাবা-মাকেই নিতে হবে। শিশুর স্থূলতা সুস্থ উপায়ে কমিয়ে আনা পরিবারে একটি বিশাল প্রায়োরিটি হিসাবে দেখা উচিত।

১। স্থূল শিশুদের ভুলেও ক্র্যাশ ডায়েট, অল প্রোটিন/কার্ব ডায়েট বা অন্য ওজন কমানোর ডায়েট দেয়া যাবে না। শিশু বয়সে সবরকম পুষ্টির সমন্বয় দরকার খাদ্যে। তাই এধরণের ডায়েটে তাদের উচ্চতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ব্যহত হতে পারে। তাদের ডায়েটের ব্যাপারে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে, তবে কিছু জিনিস আগে থেকে জেনে নেয়া দরকার।

ফাস্টফুডের মূল বৈশিষ্ট্য কি? ফাস্টফুড আকারে ক্ষুদ্র হলেও এতে থাকে হাজার হাজার ক্যালরি। তাই শরীরে একগাদা ক্যালরির যোগান দিলেও তা পেট ভরাবে না, আরও খেতে ইচ্ছা করবে। কিন্তু শরীরে মেদ ও পেশীর পরিমাণ আবার নির্ধারিত হবে আমরা কি পরিমাণ ক্যালরি জমা রাখছি শরীরে যাকে বলে ক্যালরিক সারপ্লাস। ফাস্টফুডের ক্ষেত্রে ক্যালরিক সারপ্লাস অত্যন্ত বেশি হয়।

এক্ষেত্রে বিকল্প কি? বিকল্প হচ্ছে শাক সবজি ও শস্য জাতীয় খাবার। এসব খাবারে ক্যালরি থাকে অনেক কম, তাই খুব বেশি করে খেলেও শরীরে ক্যালরিক সারপ্লাস ঘটবে না, কিন্তু পেটও ভরবে। একই সাথে এসব খাবারে খাদ্যগুণও থাকে প্রচুর পরিমাণে। তাই শিশুদের শাক সবজি খেতে উৎসাহিত করতে হবে। সাধারণত শিশুরা শাক সবজি খেতে পছন্দ করে না। তাদের একবারে জোর না করে আস্তে আস্তে বিভিন্ন শাক সবজির মজাদার খাবার রান্না করে শাক সবজির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।

২। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি চলতে পারে, তবে এসব যেন বেশি চর্বিযুক্ত না হয়। এবং শাক সবজির সাথে অনুপাতে খানিকটা কম করে এসব খাবার দেয়া উচিত স্থূল শিশুকে, প্রথমাবস্থায়। কারণ শরীর প্রোটিন বার্ন করে সবচেয়ে দ্রুত, তাই প্রোটিন ইনটেক বেশি হলে শরীরের ফ্যাট বার্ন হবে না সহজে।

৩। ফাস্টফুড, ড্রিংকস, চিনি জাতীয় খাবার ইত্যাদি পুরোপুরি বাদ দেয়া উচিত, কিন্তু একবারে বাদ দিলে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তার চেয়ে আস্তে আস্তে কমিয়ে আনুন। সপ্তাহে একবার, মাসে একবার এভাবে কমিয়ে আনুন এসব খাবারের অভ্যাস।

৪। তাদের বাইরে খেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন, সময় পেলে নিজে খেলুন তার সাথে, তাতে আপনার স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। এছাড়া পরিবারে সবাই একত্রে হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন প্রতিদিন, যা পরিবারে সম্পর্ক ভালো রাখতেও খুব উপকারী।

৫। শিশুকে মোবাইল, পিসি, টিভি ইত্যাদি অতিরিক্ত ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করুন। তাকে বিভিন্ন জায়গায় যেমন পার্কে বা লেকে বেড়াতে নিয়ে যান। বাইরের খোলা বাতাসের স্বাদ পেলে তার ঘরকুনো হয়ে থাকার অভ্যাস কমে যাবে অচিরেই। তবে ভুলেও তার থেকে তার গ্যাজেট কেড়ে নেবেন না। সবই যেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়, কারণ সে শিশু, তার উপর জোর খাটানো যাবে না।

এভাবে খানিকটা সুস্থ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুললে আপনার শিশু আর স্থূল থাকবে না, কোন রকম রোগের শিকারও হবে না। এতে আপনার শিশুটির মানসিক অবস্থা ও পরিবারের সাথে তার সম্পর্কের উন্নতিও ঘটবে।         

Anondadhara Series

দৈনিক [7]

Author

আরেফিন মিজান [8]

Photographer

সংগ্রহ [9]

Hide teaser Image

নীড়পাতা

যোগাযোগ

ডেইলি স্টার সেন্টার

৬৪-৬৫ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ,

ঢাকা - ১২১৫

ফোন : ৯১৩১৯৪২, ৯১৩২০২৫

সার্কুলেশন/বিজ্ঞাপন : ৯১৩২১১৬

সর্বশেষ সংবাদ

  • থিয়েটার করব বলে কখনো চাকরি করিনি : ফয়েজ জহির

    ২ বছর ২ মাস ৩ দিন আগে
  • রাঁধানী রান্না

    ২ বছর ২ মাস ৩ দিন আগে
  • ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ফ্যাশন

    ২ বছর ২ মাস ৪ দিন আগে
  • সততা এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে কোথাও সমস্যা হয় না : তানিন তানহা

    ২ বছর ২ মাস ৪ দিন আগে
  • কাং ইয়াতসে

    ২ বছর ২ মাস ৪ দিন আগে

ট্যাগস

  • diet
  • home remedy
  • health
  • diet tips
  • vegetable diet
  • deepika padukone
  • ranveer singh
  • health tips
  • mental health
  • office management
  • food habits
  • clean

এখানে খুঁজুন

অনুসন্ধান ফরম

অনুসন্ধান

Source URL: https://anondadhara.com/2019/02/02/childhood-obesity-cause-and-prevention