Anondadhara Online
Published on Anondadhara Online (https://anondadhara.com)

প্রথম পাতা > কাং ইয়াতসে

image

কাং ইয়াতসে

Bibek এর ছবি
২ বছর ২ মাস ৩ দিন আগে
  • facebook [1]
  • twitter [2]
  • google+ [3]
  • email [4]
  • print [5]
  • print [6]

পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্না পরপর দুটি ছয় হাজার মিটার পর্বতে ওড়ালেন লাল-সবুজ পতাকা। তার এ বিরল অভিজ্ঞতা আনন্দধারার সঙ্গে শেয়ার করলেন।

স্বপ্নের শহর লেহতে যখন পৌঁছলাম, তখন সকাল সাড়ে ৮টা। ছোট্ট এয়ারপোর্ট, দিল্লি এয়ারপোর্টের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ ছোট। এ এয়ারপোর্টে একটাই লাগেজ বেল্ট। বেল্টের কাছে দাঁড়িয়ে আমার নীল ব্যাকপ্যাকের অপেক্ষায় দৃষ্টি আটকে আছে বেল্টের সারি সারি আসতে থাকা লাগেজের দিকে। হঠাৎ চোখ ফেরাতেই দেখি জাফর ভাই (তানজানিয়ার ভিসাসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে যার সঙ্গে আমার কয়েকবার কথা হয়েছে দেশে) এবং তার বন্ধু। তখনই জানলাম, আমরা একই প্লেনে ছিলাম এবং তারাও এসেছেন স্টক কাংরি অভিযানে। জুন-আগস্ট এই-ই হয়, পর্যটক আর পর্বত অভিযাত্রীদের সমাগমে লাদাখ গমগম করে। দূর পরবাসে দেশের মানুষ দেখে খুব খুশি লাগছিল। বেশ স্বস্তি অনুভব করছি। আমাদের ব্যাকপ্যাকগুলো পাওয়ার পর তিনজন একসঙ্গে জিপে করে হোটেলের দিকে রওনা হলাম। কেননা তারা যে হোটেলে উঠবেন, সেখানে আমার ফোর্ট রোডের নির্ধারিত হোটেল ছাড়িয়ে যেতে হয়। জিপের সামনের সিটে বসেছি সোনালি আর সাদা পাহাড়ে ঘেরা ছবির মতো সুন্দর চারপাশটার কিয়দংশ ক্যামেরাবন্দি করার আশায়। জিপ চলতে শুরু করল। আচমকা একটা হালকা ভাব অনুভব করছি। ভরশূন্যতার অনুভূতি। টের পেলাম সুতোটা কেটেছে। রোজকার নিয়মসিদ্ধ জীবনের সঙ্গে। চেনা প্রাত্যহিকতার সঙ্গে, আপাতত ভো-কাট্টা, সামনের কয়েকটা দিন পুরোপুরি কাটা ঘুড়ির ভূমিকায়। হোটেলে পৌঁছতে ১৫ মিনিট লাগল। কথা হলো, বিকেলে লেহ মার্কেটে দেখা হবে। হোটেলে পৌঁছে বিশ্রামের পর বিকেলে ছুটলাম লেহ মার্কেটের দিকে। মাত্র ১০ মিনিট হাঁটার পথ, এসে আরো তিনজন বাংলাদেশির সঙ্গে আলাপ হলো। জানলাম সেদিনই তারা কাং ইয়াতসে-২ থেকে নেমে এসেছে এবং বৈরী আবহাওয়ার জন্য সামিট হয়নি। আমি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানার চেষ্টা করলাম তাদের অভিযান সম্পর্কে। বেশ ক’দিন ধরেই এখানকার আবহাওয়া বেশ খারাপ যাচ্ছে। খবর পাচ্ছিলাম স্টকে ও কাং ইয়াতসেতে প্রচুর তুষারপাত, কখনোবা বৃষ্টি। এর একদিন পর জাফর ভাই ও তার বন্ধু স্টকে যাত্রা করলেন এবং এর একদিন পর ফিরেও এলেন বৈরী আবহাওয়ার জন্য। আকাশের মুখ ভার দেখতে দেখতে আমারও মন খারাপ হতে লাগল।

স্টকে যাত্রা

জিপে আমাদের সহযাত্রী ছিলেন আমাদের হোটেলে স্কটল্যান্ডের দু’জন অভিযাত্রী (বয়স ৫৫ ও ৫৮ বছর)। আমরা স্টক ভিলেজে পৌঁছলাম দুপুর পৌনে ১টায়। তাই ওখানেই লাঞ্চ সেরে ও প্যাক ডিনার সঙ্গে নিয়ে রওনা হলাম প্রথম ক্যাম্প সাইটে চাংমার উদ্দেশে। চাংমা বেশ সহজ রাস্তা। লাদাখের আবহাওয়া শুষ্ক হওয়ায় হয়তো সবুজের ঘনত্ব তেমন নেই। অক্সিজেনের পরিমাণও কম। প্রথম ক্যাম্প সাইটে পৌঁছতে ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগল। টেন্ট পিচ করে আমরা সেদিন সেখানেই রয়ে গেলাম। বিকেলের আকাশটা খুব পরিষ্কার। দু’পাশে পাহাড় সারি সারি, মাঝখানে আমাদের ক্যাম্প। ছবির মতো সুন্দর চারপাশটা বুকে করে যতটা নিলাম, ক্যামেরায় তার একভাগ হয়তো ধরা পড়ল। সন্ধ্যা নেমে এলো, বিউটেনে চা বানাতে বেশ লাগে। খুব দ্রুত পানি গরম হয়। চা খেতে খেতে মাঝবয়সী এক ব্রিটিশ ভদ্রমহিলার সঙ্গে অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। ডিনার খেয়ে সেদিনের মতো পরদিনের লম্বা ট্রেকের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকাল ১০টায় রওনা হলাম বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে।

২৫ তারিখ লেহ পৌঁছে ২৬ তারিখ বিশ্রামের পর ২৭ তারিখ আমরা একই পথে কাং ইয়াতসে-২-এর পথে রওনা হলাম। ৩ ঘণ্টা গাড়ির রাস্তা পেরিয়ে সেদিন আমরা চকদো গ্রামে হোমস্টেতে রয়ে গেলাম। হোমস্টেতে থাকা, খাওয়া ও পরদিন প্যাকলাঞ্চ জনপ্রতি ১২শ’ টাকা। পরদিন ৬টায় নাশতা খেয়ে আমরা তৈরি। কিন্তু আকাশের মুখ ভার। একপশলা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়ে গেল। সেই গতবারের মতো। আমি জানিয়ে দিলাম, আমি যেতে চাই না, লেহ ফিরে চলো। কিন্তু আমার সহযাত্রী বলল, আরেকটু দেখি দিদি। আমরা ২ ঘণ্টা বসে রইলাম। এখন আকাশের একপাশে মেঘ, অন্যপাশে রোদ। ১২ জনে একদল অভিযাত্রীকে নিমালিংয়ের উদ্দেশে যেতে দেখলাম। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও আকাশ দেখে মনে হলো হয়তো এমনই রবে সারাদিন আকাশ। কখনো মেঘ, কখনো রোদ্দুর। আমরা তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়লাম। চকদো থেকে নিমালিং যাওয়ার রাস্তায় প্রচুর মোরেন পেরোতে হয়, আর নালা তো আছেই ২৫টার মতো। সেই একপি নালা আর মোরেনময় রাস্তা পেরিয়ে আমরা চলতে লাগলাম। যেতে যেতে শেষবার নালাগুলোর ভয়ংকর রূপ মনে পড়ছিল। যদিও এখন তারা নিরীহ প্রাণীর মতো শান্ত। কলকল ধ্বনিতে বয়ে চলেছে। প্রায় ৪টায় আমরা নিমালিং পৌঁছে গেলাম। ৮ ঘণ্টার ট্রেক। এখন টেন্ট পিচ করার পালা। ক্ষুধায় প্রায় পাগল হয়ে গেছি। আমার যাত্রী টেন্টের স্ট্যান্ডগুলোর ভেতরের রাবারের বন্ধনী ছুটিয়ে ফেলেছে। তাই কিছুতেই টেন্ট পিচ করতে পারছিলাম না আমরা। এই চেষ্টায় ২ ঘণ্টা কেটে গেল। আমাদের সাহায্য করতে দু’জন গাইড ছুটে এলো। অনেক বুদ্ধি করে অবশেষে টেন্ট পিচ করা গেল। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাসে হিম হয়ে গিয়েছিলাম ততক্ষণে। তড়িঘড়ি টেন্টের ভেতরে স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে পড়লাম। চা, স্যুপ বানানো হলো। নিমালিংয়ে হোমস্টের ব্যবস্থা আছে, খাবারও পাওয়া যায়। যেহেতু বেস ক্যাম্পে খাবারের বা থাকার ব্যবস্থা নেই, তাই সিদ্ধান্ত হলো সে রাতে আমরা নিমালিং থাকব, পরদিন লাঞ্চ করে ও রাতের খাবার সঙ্গে নিয়ে বেস ক্যাম্পে যাব।

আমরা ৭টায় রাতের খাবার খেয়ে ক্লান্তিতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম সেদিন। পরদিন দুপুরে খেয়ে ও রাতের খাবার সঙ্গে নিয়ে ২ ঘণ্টা ট্রেক করে বেস ক্যাম্পে যখন গেলাম, তখন ৪টা। সেখানে ঝলমলে রোদে কয়েকজন ক্রিকেট খেলছে। টেন্ট পিচ করে বিশ্রাম, পরে ৭টায় ডিনার খেয়ে ঘুমিয়ে নিলাম একটু। ১০টায় ঊঠে চা, স্যুপ, নুডলস, খিচুড়ি, মধু দিয়ে রুটি যে যা যত পারলাম, খেয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। জানা গেল, এর আগে ক্রাম্পন পয়েন্টে অ্যাডভান্স বেস ক্যাম্প করতে দিত। এখন দেয়া হয় না। তাই বেস ক্যাম্পই সামিট ক্যাম্প। ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিট মোরেন আর বরফ পেরিয়ে ক্রাম্পন পয়েন্টে পৌঁছলাম। বেস ক্যাম্প থেকে সামিট পর্যন্ত পুরো রাস্তাই চড়াই। এবার টানা ৬ ঘণ্টা টেকনিক্যাল স্লোপে রোপ আপ হয়ে চড়ে তবে সামিট। হাঁটছি তো হাঁটছি। মুখে একটা টফি একবার রাখলে ঠিক ১ ঘণ্টা পর সেটা শেষ হয়। ৬টা টফি শেষ। হাঁটছি তো হাঁটছি। পথ যেন ফুরোয় না। ভীষণ ক্লান্ত, পা যেন চলতে চায় না। ক্লাইমেক্স মোমেন্টে পুরো শ্রীর মন অস্তিত্ব যখন এক বিন্দুতে, তখন মন থেকে একটি প্রশ্ন বারবার প্রায় বেরিয়ে আসতে চেয়ে মুখে এসে আটকে যায়। শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করি, অর কিতনি দূর হ্যায়? আমার সহযাত্রী বলল, ৩০ কদম, ব্যাস। ওই যে পাথর দেখছ, ওটাই সামিট পয়েন্ট। মনে হচ্ছিল, সত্যিই ৩০ কদম! আমি পৌঁছতে পারব তো? কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে পড়ছিল, গত কয়েকদিনে কতগুলো টিম এই চূড়া সামিট করতে এসে ফিরে গেছে। আমি মনোযোগ দিয়ে চলতে লাগলাম। আমার আগে আমার সহযাত্রী বিকাশ। চূড়ায় পৌঁছে সে তার মুঠোবন্দি হাতের সঙ্গে আমার মুঠোবন্দি হাত মিলিয়ে অভিনন্দন জানাল। বিশ্বাস হচ্ছে না আমি চূড়ায় এসে গেছি। সেই আনন্দের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সামিটে বসে মনে হচ্ছিল আমি কি সত্যিই ৬২৫০ মিটার উঠে পড়েছি। এই ক’দিনে বাংলাদেশেরই না শুধু, বেশ কয়েকটি চূড়ায় চড়তে না পারার গল্প শুনেছি, নিজেও প্রথম যাত্রায় নিমালিং পর্যন্তও আসতে পারিনি বৈরী আবহাওয়ার জন্য। খুব স্যারকে মনে পড়ছিল। সেবার আবহাওয়া ভালো থাকলে স্যারের সঙ্গেই এই চূড়ায় পা রাখতাম। বিকাশ বলল, দিদি, ৪জি সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে। আমি স্যারকে ফোন করতে বললাম। ওপাশে রিং বাজছে। স্যার হ্যালো বলতেই বললাম, স্যার, মে রেশমা হু, কাং ইয়াতসে ২ টপ, তিনি বললেন, হু। স্যার অভিনন্দন জানালেন... আওয়াজ শুনে বুঝলাম, তিনি কত খুশি হয়েছেন। আমিও কিছু মেয়ের শিক্ষক। তাদের পেরে ওঠায় আমার যেমন আনন্দ হয়, স্যারের গলায় সেই সুর টের পেলাম। চারপাশ হোয়াইট আউট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের নিরাপদে ঘরে ফিরতে হবে। প্রায় ৩০ মিনিট পর আমরা নামতে শুরু করলাম। সেদিন বেস ক্যাম্পে ও পরদিন আমরা লেহ হোটেলে ফিরে এলাম।

Anondadhara Series

পর্ব ৫১৫ [7]

Photographer

সংগ্রহ [8]

Hide teaser Image

নীড়পাতা

যোগাযোগ

ডেইলি স্টার সেন্টার

৬৪-৬৫ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ,

ঢাকা - ১২১৫

ফোন : ৯১৩১৯৪২, ৯১৩২০২৫

সার্কুলেশন/বিজ্ঞাপন : ৯১৩২১১৬

সর্বশেষ সংবাদ

  • থিয়েটার করব বলে কখনো চাকরি করিনি : ফয়েজ জহির

    আজকে
  • রাঁধানী রান্না

    আজকে
  • ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ফ্যাশন

    ২ বছর ২ মাস ৩ দিন আগে
  • সততা এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে কোথাও সমস্যা হয় না : তানিন তানহা

    ২ বছর ২ মাস ৩ দিন আগে
  • কাং ইয়াতসে

    ২ বছর ২ মাস ৩ দিন আগে

ট্যাগস

  • diet
  • home remedy
  • health
  • diet tips
  • vegetable diet
  • deepika padukone
  • ranveer singh
  • health tips
  • mental health
  • office management
  • food habits
  • clean

এখানে খুঁজুন

অনুসন্ধান ফরম

অনুসন্ধান

Source URL: https://anondadhara.com/2020/03/21/kaan-iyyaatse