ঢাকার মঞ্চে আলোচিত নাটকের মধ্যে অন্যতম প্রযোজনা ‘গহর বাদশা ও বানেছা পরী’। দেশের প্রথম সারির থিয়েটার দল নাগরিক নাট্যাঙ্গন প্রযোজিত এই নাটকটি মঞ্চায়নের প্রতি সন্ধ্যায় সত্যিই আলোকিত করে ঢাকার মঞ্চ। যাতে অভিনয়, সেট, আলোকসজ্জা সব মিলিয়ে দৃষ্টি জুড়িয়ে দেয় দর্শকদের। নাটক দেখার সময়টাতে মনে হবে যেন কোনো এক রূপকথার রাজ্যের মধ্যেই বিচরণ করছি। ‘গহর বাদশা ও বানেছা পরী’ নাটকটি এই দলের ২০তম প্রযোজনা। দক্ষিণাঞ্চলের লোকগাথা অবলম্বনে নাটকটির পুনর্কথন ও নির্দেশনা দিয়েছেন হৃদি হক। নাটকে রাজ্যের উজিরের চক্রান্তে গিলামাইট বনে গহর বাদশার দুর্দশা ও বানেছা পরীর সঙ্গে তার প্রেমের আখ্যান নিয়ে এগিয়েছে নাটকটির গল্প। সবশেষে জয় হয় সত্যের। সব ষড়যন্ত্রের বাধা ডিঙিয়ে নিজের বুদ্ধি আর মেধা দিয়ে ১২ বছর পর গহর বাদশা জয় করেন নিজের হারানো রাজ্য।
এ নাটকে কাজ করেছেন অর্ধশতাধিক নাট্যকর্মী। নাটকটির কোরিওগ্রাফ করেছেন নৃত্যশিল্পী ওয়ার্দা রিহাব। কামরুজ্জামান রনির সংগীত পরিচালনায় নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন সাজু খাদেম। ঠান্ডু রায়হানের আলোক পরিকল্পনায় নাটকের পোশাক পরিকল্পনায় রয়েছেন মাহমুদুল হাসান।
গল্পটি মূলত আবহমান বাংলার লোকায়ত পালার মতোই। কিন্তু নাগরিক নাট্যাঙ্গন বর্ণিল শিল্পালয়ে নাটকটিকে মঞ্চে এনেছে আধুনিক ফর্মে। যেখানে গিলামাইট বনে বিশ্বিং বাদশার শিকারে যাওয়ার ঘটনা দিয়ে গল্পের শুরু। শিকারের একপর্যায়ে হরিণশাবকের দিকে তীর ছোড়েন বাদশা।
মানবসন্তানের কান্নায় তিনি বুঝতে পারেন, চরম ভুল হয়ে গেছে। অভিশাপ নিয়ে রাজ্যে ফেরেন তিনি। এরই মধ্যে তার ঘর আলো করে আসে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান। রাজ্যজুড়ে যখন আনন্দের বন্যা, বাদশার মনে সন্তান হারানোর ভয়। পুত্রকে প্রাসাদের বাইরে যেতে দেন না রাজা। কিন্তু শত আয়োজনেও বাদশাহ কি আটকে রাখতে পারেন তার নিয়তি! ১২ বছর বয়সে বিশ্বিং যখন বড় ছেলে গহরকে রাজ্যের অধিপতি করেন, তখন উজিরের চক্রান্তে গহর আবদার করে গিলামাইট বনে শিকার করতে যাবে। মায়ের আকুতি, স্ত্রী কলাবতীর মিনতি সব এড়িয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী সরাবনকে বাবা ও মায়ের দায়িত্ব দিয়ে গহর যায় শিকারে। গিলামাইট বনে গিয়ে গহর বন্দি হয় বিশ্বিং দানবের হাতে। অবশেষে বহু যুদ্ধ ও সংগ্রামের পর সে বনের বানেছা পরীকে নিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে দেখে রাজ্য উজিরের দখলে। অবশেষে সে বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে জয় করে তার রাজ্য। সত্যের জয় অবধারিত, তাই সব বাধা পেরিয়ে গহর পরিশেষে জয় করে বিশ্বিং রাজ্য। জয় হয় প্রেমের, জয় হয় সত্যের, জয় হয় সুন্দরের।
সুবিশাল ক্যানভাসে আলো ঝলমলে আবৃত ‘গহর বাদশা ও বানেছা পরী’ নাটকে হৃদি হক নির্দেশনার পাশাপাশি বানেছা পরীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘গহর বাদশা ও বানেছা পরী’ নাটকটি নির্দেশনার মধ্য দিয়ে মঞ্চাঙ্গনে নির্দেশক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন হৃদি হক। নির্দেশনায় নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়ে সফল হয়েছেন তিনি। নাটকটির মাধ্যমে নির্দেশনা এবং অভিনয় দুই ক্ষেত্রেই সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছেন তরুণ এই নাট্য নির্দেশক।
লোকজ গল্প নিয়ে ঢাকার মঞ্চে এর আগে আরো অনেক নাটক এলেও নাগরিক নাট্যাঙ্গনের কর্মীদের কাছে এ অভিজ্ঞতা প্রথম। মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানোর লক্ষ্য লোকগাথাকে বেছে নিয়েছে নাগরিক নাট্যঙ্গন। দর্শকদের কাছে প্রশংসিত গহর বাদশা ও বানেছা পরী। লোকজ ধারা ঠিক রেখে কিছুটা আধুনিকতার মিশেল আছে নাটকে। পোশাকে রঙের চাকচিক্য আছে। গানে-নাচে ভরপুর এ নাটক উপভোগের সময় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকবে দর্শক।