গল্পটা অনেক চেনা। তাই বলে কপি নয় কিন্তু। একেবারে মৌলিক গল্পে বোনা কাহিনী। ছবির প্রথম পোস্টার দেখে যারা নকল বলে গলা ফাটাচ্ছিলেন তারা কিছুটা হতাশ হবেন। তবে দৃশ্যায়নের কিছু ফ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বিদেশি ছবি থেকে। তাহলে কী ছবিটি নকল ছবির তালিকায় পড়ে? মোটেও তা নয়। মানুষ তো অনেক কিছু থেকেই অনুপ্রাণিত হতে পারে। তবে একটা কথা ঠিক ছবিটা শাকিব খানের। তার নিজস্ব একটা দর্শকশ্রেণি গড়ে উঠেছে। শাকিব খানের অভিনয় দেখার জন্যই ‘বীর’ দেখেছেন দর্শকরা। পুরো সিনেমাজুড়েই দুর্দান্ত দাপটে অভিনয় করেছেন। জীবনঘনিষ্ঠ বাস্তবধর্মী সংলাপ আলোড়িত করবে মুহূর্তে মুহূর্তে। দর্শকরা নড়েচড়ে বসবেন কিছুক্ষণ। একটুখানি ভাবাবে, মন খারাপ করবে। হয়তো হাততালি দিয়ে উঠবে অজান্তেই। এখানেই কারিশমা এই নায়কের। নিজের দিকে সবটুকু মনোযোগ নিতে পারেন। অন্য নায়করা সেই কৌশল রপ্ত করতে পারেননি। সিনেমা হলগুলোতে ‘বীর’ অনেকটা উৎসবের রঙ ছড়িয়েছিল কয়েকদিন। যেখানে বাংলা সিনেমা দর্শকরা দেখেই না, সেখানে এই উৎসবের আমেজ সিনেমাপ্রেমীদের জন্য আনন্দের।
বীর গল্পটা এমন- ছোটবেলায় এক মাদক ব্যবসায়ীকে খুন করে জেলে যায় বীর। অনেক বছর পর ফিরে এলে তার মামা বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে। ফেরার পর আবারো একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে জেলে যেতে হয় তাকে। এলাকার ভোটের রাজনীতির গুঁটি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য জেল থেকে বের করে আনা হয় বীরকে। তাদের কাজে ব্যবহৃত হতে হতে এক সময় অনেক সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ায়।
কাজী হায়াৎ পরিচালিত ৫০তম ‘বীর’ ছবির গল্পটি এমনই। এই ছবির কিছু সংলাপের জন্য সাধুবাদ পেতেই পারেন তিনি। তবে গল্প নিয়ে অনেক কথা বলার জায়গা আছে। গল্পটায় চলমান রাজনীতির আলো-অন্ধকারের অনেক দিক উঠে এসেছে। কিন্তু গল্পটা ঠিকভাবে বলতে পারেননি। জলদি শেষ করতে চাওয়ার কারণে এমনটা ঘটেছে। আরো বেশকিছু অসংগতি রয়েছে, যা ইচ্ছা করলে পরিচালক ঠিক করতে পারতেন। কেন করলেন না সেটা বোঝা গেল না। ছবির নায়ক (বীর) শাকিব খান ভোটকেন্দ্রের সামনে মারামারি করছেন। সে সময় একবার পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। কিন্তু মারামারির শেষদিকে এলো পুলিশ। তাহলে আগে পুলিশ কেন দেখানো হলো ঠিক বোঝা গেল না। একজনের মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে, অথচ মায়ের ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানো! এটা কীভাবে সম্ভব? কবর দেয়ার দৃশ্যটা চটজলদি ও সাদামাটাভাবে শেষ করতে চেয়েছেন। ছবির চরিত্রের ধর্ষক ডনকে যেভাবে মারা হলো সেটা খুব অগোছালোভাবে করা হয়েছে। সাংবাদিকের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, চরিত্রটিতে তিনি সাংবাদিক হয়ে উঠতে পারেননি। ভয়ে ভয়ে অভিনয় করেছেন।
বুবলি নায়িকা থেকে অভিনেত্রী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে কখনো কখনো তার পোশাক উপস্থাপনায় দৃষ্টিকটু লেগেছে। মিশা সওদাগর অনেকদিন পর ভালো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলেন। নানাশাহ ছোট চরিত্র হলেও দারুণ অভিনয় করেছেন। বীরের বন্ধুর চরিত্রে নাদিমকে খুব খারাপ লাগেনি।
ছবির গানগুলোর মধ্যে পুঁথিপাঠের সুরে ‘কী চমৎকার দেখা গেলো’, ইমরান ও কোনালের কণ্ঠে দ্বৈত গান ‘তুমি আমার জীবন’ ও ‘তোকে দেখলে একটি বার’ গানগুলো দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। তবে একটা কথা সত্য, শেষ পর্যন্ত ‘বীর’ ছবিটা শাকিব খানের জন্যই দর্শকরা দেখেছেন।