এই শীতে ত্বকের পরিচর্যা শুরু করুন কমলা দিয়ে। মৌসুমি ফল হিসেবে কমলা খাওয়ার জন্য যেমন উপকারী, তেমনি শুষ্ক, মিশ্র বা তৈলাক্ত যেকোনো ত্বকের পরিচর্যায় ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ কমলার জুড়ি নেই। কমলা নানা গুণে ভরপুর, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘ই’ থেকে শুরু করে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম রয়েছে। কমলার রস বা খোসা দুটোই ত্বক পরিচর্যার জন্য খুব উপকারী।
কমলার রস ও খোসা গুঁড়ো ক্লিনজার হিসেবে দারুণ কাজ করে, তেমনি ত্বকের ময়েশ্চার বজায় রাখতে সাহায্য করে। ব্রণ, অ্যাকনে, সানট্যান, বলিরেখা, ডার্ক সার্কেল, অনুজ্জ্বল ত্বক আরো হাজারো সমস্যা দূর করতে কমলা দারুণ কাজ করে। ত্বকের দাগ-ছোপ কমিয়ে জেল্লা বাড়াতেও কমলা সাহায্য করে থাকে।
আগে রূপ-সৌন্দর্য রক্ষার উপকরণ নারীরা ঘর থেকেই জোগাড় করে নিত। কমলার খোসা গুঁড়ো, দুধের সর, হলুদ বাটা, নারকেল তেল, মধু আরো কত কী। ঘরে বসে এক্সপেরিমেন্ট করে বিভিন্ন স্ক্র্যাবার, ক্লিনজার তৈরি করে নিত। সেখান থেকেই এখনো প্রচলিত অনেক প্রথা। গোসলের আগে ময়দার সঙ্গে দুধের সর ও কমলার খোসা বাটা মাখা হতো। এগুলো ভালো স্ক্র্যাবার। কখনো এর সঙ্গে কমলার রস বা হলুদ বাটাও মেশানো হতো। আর ঘরোয়া রূপচর্চায় সুন্দর, কোমল আর ঈর্ষণীয় উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী হয়ে উঠতেন অনেকেই। প্রাকৃতিক উপাদানে রূপচর্চায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যেত। নানাভাবে কমলা ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন। কমলা খাওয়ার পর আমরা খোসাটা ফেলে দিই। কিন্তু জানেন কি এই শীতকালে ত্বকের যত্নের জন্য কমলার খোসার মতো এত উপকারী আর কিছু নেই। কমলার খোসা মুখে হালকাভাবে ঘষে নিন। কমলার খোসার তেলভাব আপনার ত্বককে সুন্দর করবে।
এছাড়াও কমলার খোসা ধুয়ে বেটে বা ব্লেন্ডারে মিক্স করে অথবা শুকিয়ে গুঁড়ো করে স্টোর করতে পারেন। যখন যেমন প্রয়োজন বের করে যেকোনো প্যাকে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। স্কিন টোনিংয়ের জন্য কামলার রসও ব্যবহার করতে পারেন। কমলার রসে রয়েছে ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রপার্টি, যা ত্বককে টোনড করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পর একটি বাটিতে কমলার রস নিন। কমলার রসে তুলো ভিজিয়ে ত্বকের ওপর হালকা করে চেপে লাগান। ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হবে, ত্বকের জেল্লা বাড়বে। কমলার রসের সঙ্গে গোলাপজল, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে তুলোয় করে মুখ মুছে নিন। শুকিয়ে গেলে ঈষদুষ্ণ পানিতে তুলো ভিজিয়ে মুখ মুছে নিন। এতে ত্বকের ডেডসেল, ধুলো-ময়লা দূর হয়ে যাবে, সঙ্গে ত্বক ময়েশ্চারাইজ হবে। ত্বকের রুক্ষভাব কমে গিয়ে ত্বক কোমল ও মোলায়েম হবে।
ন্যাচারাল ব্লিচ হিসেবে কমলার রস ব্যবহার করতে পারেন। কারণ কমলার রস ত্বকের দাগছোপ দূর করতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কমলা সামান্য ম্যাশ করে একসঙ্গে সামান্য দই, লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ভেজা হাতে সার্কুলার মুভমেন্টে ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে সানট্যানের ফলে ত্বকে যে কালো দাগ ছোপ হয়, তা সহজে চলে যাবে। স্কিন টোন লাইট হবে, সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। একটি বাটিতে গরম পানি নিয়ে তাতে কমলার রস মিশিয়ে মুখে স্টিম নিন। এতে ত্বকের জেল্লা বাড়বে ও স্কিনটোন লাইট হবে।
অরেঞ্জ স্ক্র্যাবার
কমলার খোসা গুঁড়ো করে এক টেবিল চামচ টকদই ও সামান্য চালের গুঁড়ো মিশিয়ে একটা ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। স্ক্র্যাবার হিসেবে দারুণ কাজ করবে। সপ্তাহে তিনদিন এই পেস্টটা সারা মুখে বিশেষ করে ব্ল্যাক হেডসপ্রবণ জায়গায় ভালোভাবে লাগিয়ে দিন। ১৫ মিনিট পর হালকা হাতে সার্কুলার মুভমেন্টে ঘষে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ফেস মাস্ক
কমলার খোসা ভালোভাবে বেটে নিন। এর সঙ্গে সামান্য বেসন ও গোলাপজল মিশিয়ে ঘন ফেস মাস্ক তৈরি করুন। এই ফেস মাস্ক ঠোঁট ও চোখের চারপাশ বাদে পুরো মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ভেজা হাতে সার্কুলার মুভমেন্টে হালকা করে ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনদিন এই ফেস মাস্ক ব্যবহার করে দেখুন। ত্বকে জমে থাকা ধুলোবালি, ময়লা দূর হয়ে যাবে ও ত্বকের অতিরিক্ত তেলভাব কমে যাবে। ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল, কোমল ও মসৃণ।
ত্বকের প্রতি যত্নবান হোন। নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিন। কমলার রস ও খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার সঙ্গে সঙ্গে কমলার জুস, কমলা বা কমলা দিয়ে তৈরি করা সুস্বাদু খাবার খান। শীতেও হয়ে উঠুন ঈর্ষণীয় উজ্জ্বল ত্বকে অধিকারী। মনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেও ফাগুন আর ভালোবাসার উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়বে চারপাশে।