শীতের সময় ছোট-বড় সবাই ত্বকের সমস্যায় কম-বেশি ভুগে থাকেন। আর্দ্রতার অভাবে স্কিনের এপিডারমিস থেকে বেশি পরিমাণে ওয়াটার ইভাপোরেশন শুরু হয়। স্ট্র্যাটাম করনিয়াম আবহাওয়ার পরিবর্তনের থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ছোটদের এ সময় সাবধানে থাকতে হয়, ত্বকের কোমলতা অনেক সময় বিনা যত্নে হারিয়ে ফেলতে থাকে। তাই সতর্ক হন।
শীতকালে বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অ্যাটোপিক ভার্সাইটিস। এটা এক ধরনের একজিমা। এতে বাচ্চাদের খুব হাঁচি হয়, যাকে অ্যালার্জিক রাইনাটিস বলে। অনেক সময় এক্ষেত্রে ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা দেখা যায়। এই অসুখ অনেক সময় বংশানুক্রমে দেখা যায়। এটা জেনিটিক্যালি ডিটারমিনড স্কিন ডিজিস। অ্যাটোপিক ডার্মাইটিসের প্রধান সমস্যা হলো শুষ্ক ত্বক, যাকে বলে জেরোসিস। আর এক ধরনের স্কিনের সমস্যা হলো ‘ইকথিওসস’, এটাও হেরিডিটরি স্কিন প্রবলেম। ত্বকের ওপর আঁশের মতো স্তর দেখা যায়। এছাড়া দেখা যায় ‘সেরোসিস’। সারা শরীরে লাল প্যাচ দেখা যায়। স্ক্যাল্পে খুশকি দেখা যায়। অপুষ্টি, হাইপোথাইরয়েডিজম বা ডায়াবেটিসে ভুগলে বাচ্চাদের শীতকালে অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের সমস্যা দেখা যায়।
শীতকালে শুষ্ক ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা হওয়া বেশ কমন। অ্যাটোপিক ডার্মাইটিস, ইরিটেন্ট ডার্মাইটিস ও ন্যাপকিন র্যাশও হতে পারে। মডারেট বা লো ডোজের স্টেরয়েড ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার দিয়ে এ ধরনের অ্যালার্জির চিকিৎসা করা হয়। স্টেফালোকঙ্কাল ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, হারপিস ভাইরাস ইনফেকশন বেশ কমন। ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিভাইরাল ট্যাবলেট বা সিরাপ দেয়া হয়। এর সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল ক্রিমও উপকারী।
শীতের সময় ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে ত্বকের যত্ন নিতে হবে অবশ্যই। ফুলস্লিভড সুতির জামা পরিয়ে রাখুন বাচ্চাদের, যেন বাচ্চার হাত ও পা ঠাণ্ডা থেকে সুরক্ষিত থাকে। সিনথেটিকের কাপড় শুষ্ক ত্বকে ইরিটেশন তৈরি করতে পারে। সেনসেটিভ স্কিন হলে উলের জামা-কাপড়ও যেন বাচ্চার ত্বককে স্পর্শ না করে। তখন সুতির জামার ওপর উলের সোয়েটার পরিয়ে দিন। তাহলে সরাসরি উলের জামা বাচ্চার ত্বককে স্পর্শ করতে পারবে না। গোসলের আগে অলিভ অয়েল দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ময়েশ্চারাইজিং সোপ বা লিকুইড সোপ ব্যবহার করুন। হালকা গরম পানিতে গোলস করান।
যেসব বাচ্চার ত্বক খুব শুষ্ক, শীতকালে তাদের ঠোঁট খুব ফাটে। এই সময় যদি ঠিকমতো যত্ন না নেয়া হয়, তাহলে ইনফেকশনও হতে পারে। বাচ্চার ঠোঁট শুকনো মনে হলেই নারকেল তেল লাগাতে পারেন। এছাড়া দুপুরে খাওয়ার পর এবং রাতে শোবার আগে ঠোঁটে অল্প নারকেল তেল লাগাতে পারেন। নারকেল তেলে জীবাণু প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে, তাই ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতাও কমে যায়। গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলিও ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঠোঁটে নরম ভিজেভাব বজায় থাকে। ঠোঁট যদি অতিরিক্ত মাত্রায় ফাটতে শুরু করে, ডাক্তারের পরামর্শমতো প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে হতে পারে।
বাচ্চাকে শীত হলেও প্রতিদিন গোসল করানো প্রয়োজন। এর সঙ্গে সপ্তাহে ২-৩ বার শ্যাম্পু দিয়ে বাচ্চার চুল পরিষ্কার করুন। নাহলে রুক্ষ চুল আর খুশকির উপদ্রব হতে পারে। চুলে নিয়ম করে তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। ২-৩ বার হাত-পা ভালো করে ধুয়ে নিন। বিশেষ করে বাচ্চা বাইরে থেকে এলে ভালো করে হাত-পা পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন।
ত্বকের নানা সমস্যা দূর করতে পানি পান করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে পানি পান করার তৃষ্ণা লাগে না বলে পানি কম খাওয়া হয়। কিন্তু এটা করলে হবে না। ছোটদের মনে করে একটু পরপর পানি খাওয়াতে হবে। শীতের সময় একটু ঠাণ্ডা লাগলে সর্দি-কাশি হয়। তাই বাচ্চাকে সবসময় গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। সবজি-ফল বেশি করে খাওয়াতে হবে। বাইরে গেলে কানটুপি ব্যবহার করুন। আর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। ধুলো-বালি থেকে দূরে রাখুন।