গত ২৫ অক্টোবর ২০১৯-এ দ্য ডেইলি স্টার ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জীবনের জয়গানের ১২তম আসর। এ বছর ‘মীনালাপ’ চলচ্চিত্রটির জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেলেন সুবর্ণা সেজুঁতি। বর্তমান ও সামনের দিনের পরিকল্পনা নিয়ে কথা হলো তার সঙ্গে।
আনন্দধারা : আজকের এই অনুষ্ঠানে একজন বিজয়ী হিসেবে এসে আপনার কেমন লাগছে?
সুবর্ণা সেজুঁতি : প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই দ্য ডেইলি স্টার ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংককে এমন সুন্দর একটা আয়োজন করার জন্য। এটি আমার জন্য বাংলাদেশের প্রথম কোনো প্রতিযোগিতার পুরস্কার। এটা আমার প্রথম কাজ আর যেহেতু শুরুতেই এমন একটা পুরস্কার পেয়েছি, তাই এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা বিষয়। আমি আমার ‘মীনালাপ’ টিমের সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
আনন্দধারা : ‘মীনালাপ’ করার চিন্তাটা কীভাবে মাথায় এলো?
সুবর্ণা সেজুঁতি : আমি যখন মীনালাপ লিখি, তখন পুনেতে আমার পাঁচ বছর থাকা হয়ে গেছে। বাঙালিরা কেন পুনেতে আসছে, কীসের জন্য আসছে এটা নিয়ে আমি গবেষণা শুরু করি। আমার ‘মীনালাপ’ ওই গবেষণারই ফল। ছবিতে আমি যা কিছু দেখিয়েছি, তা সবকিছু আমার ব্যক্তিগত অনুধাবন থেকে করা। আমার দীর্ঘদিন বাইরে থাকা এবং আমার ডিপ্লোমা প্রজেক্টের একটা ক্র্যাফট তৈরি করার উদ্দেশ্যেই ওখানকার বাঙালিদের খুঁজতে বের হই। তারপর আমি জানতে পারি স্বর্ণকার এবং গার্মেন্টসের লোকেরাই এখানে আসে। এভাবেই আমার গল্পের শুরু হয় এবং আমার মূল উদ্দেশ্যই ছিল যেন ছবিতে বাস্তব চিত্রটা উঠে আসে।
আনন্দধারা : বর্তমানে কী নিয়ে ব্যস্ততা চলছে?
সুবর্ণা সেজুঁতি : বর্তমানে ফিচার ফিল্মের স্ক্রিপ্ট নিয়ে ব্যস্ততা চলছে। ওইটার একটা ড্রাফট তৈরি হয়েছে। আমি এখন সেটা নিয়ে বের হব। নভেম্বরে মীনালাপ ছবিটি দিল্লিতে একটা ফেস্টিভ্যালে দেখানো হবে। সেখান থেকে আমি মুম্বাই বা পুনেতে গিয়ে আমার টিমের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে প্রথম ফিচার ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লেখার যে কাজটুকু বাকি আছে সেটা শেষ করব। তারপর সেটা নিয়েই কাজ শুরু করব বলে আশা করছি।
আনন্দধারা : বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের কেমন সম্ভাবনা দেখছেন?
সুবর্ণা সেজুঁতি : আমার মনে হয়েছিল আমি যদি টেকনিক্যালভাবে একটু দক্ষতা অর্জন করি, তাহলে পরিপূর্ণভাবে কাজগুলো করতে পারব। এজন্যই আমার বাইরে পড়তে যাওয়া। বাইরের ওদের সঙ্গে কাজ করে আমার মনে হয়েছিল আমি কি পারব আমার দেশে এগুলো প্রয়োগ করতে? কিন্তু দেশে আসার পর আমি দেখলাম বেশকিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ছেলে-মেয়েরা পড়ে পাস করে বের হচ্ছে। এটা একটা সুন্দর পরিস্থিতি। আমার এখন মনে হয় শুধু সহযোগিতা না, রীতিমত তাদের নিয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব। এটা আমার কাছে অনেক ইতিবাচক বিষয় বলে মনে হয়েছে। আর ইতিবাচক বলেই আমি বাইরে পড়তে যেতে পেরেছিলাম। পড়ে আসার পর ৭-৮ বছরে আমি যে পরিবর্তন দেখছি, তা আমার কাছে খুবই ভালো এবং সম্ভাবনাময় বলে মনে হয়েছে।
আনন্দধারা : চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পরা সম্পর্কে জানতে চাই?
সুবর্ণা সেজুঁতি : যেহেতু এখন আমি সিনেমা বানাতে শিখেছি, তাই এখন আমি সিনেমা বানানোর চেষ্টা করে যাব। একটা সিনেমার সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত, যেমন প্রযোজক, চিত্র পরিবেশক। এ ব্যাপারগুলো আমি এখনো জানি না, তাই আমি এখন এগুলো শিখতে শুরু করব। আমার মূল লক্ষ্য এখন ছবি বানানো। আমি এখন দুই-তিনটার মতো স্ক্রিপ্ট তৈরি করছি। প্রথম ফিচার যেটা করতে চাই, সেটা নিয়েই আমি এখন বাইরে যাচ্ছি। শর্ট ফিল্মের জন্যও কিছু স্ক্রিপ্ট লিখে রেখেছি। এরপর যখন পরিচালনায় নামব, যদি প্রযোজক পাই তাহলে একটার পর একটা কাজ করে যাব।
আনন্দধারা : স্ক্রিপ্টের বাইরে আর কিছু কি করার ইচ্ছা আছে?
সুবর্ণা সেজুঁতি : স্ক্রিপ্ট ও পরিচালনা। এর বাইরে আর কিছু করার ইচ্ছা এই মুহূর্তে নেই। পরিচালনা তো আমি সবেমাত্র শিখলাম। তাই আমি এটি পরীক্ষা করে দেখতে চাই। আজকে পুরস্কার পাওয়ার পর আমার মনে হয়েছে এটা হয়তো গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে ছোটগল্প আকারে। এবার আমার বড়গল্পটাও করে দেখার ইচ্ছা রয়েছে। যদি দর্শদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাই, তাহলে আমি ছবি বানানোর চেষ্টা করব।
আনন্দধারা : ‘জীবনের জয়গান’ নিয়ে আমাদের পাঠকদের উদ্দেশে কি কিছু বলতে চান?
সুবর্ণা সেজুঁতি : ‘জীবনের জয়গান’ অনুষ্ঠানটি আমার কাছে মনে হয়েছে অনুপ্রাণিত করা জীবনবোধ এবং সৃষ্টিশীলতাকে। যে পুরো জীবনজুড়ে কাজ করে এসেছে এবং যে নতুন কাজ করছে তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। দুটো সময়কে একসঙ্গে মঞ্চে তুলে ধরা এটা অনেক বড় একটা উপহার।